হাঁটিহাঁটি পা পা করে একযুগ পার করল চাঁপাইনবাবগঞ্জের একমাত্র কমিউনিটি রেডিও-রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম। আলোচনা, কেক কাটা, আবৃত্তি আর সংগীতের মধ্যদিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে আজ সকালে জেলাশহরের বেলেপুকুরে প্রয়াসের নকীব হোসেন মিলনায়তনে উদ্যাপন করা হয় যুগপূর্তি।
অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধাভরে অবদান স্বীকার করে রেডিও মহানন্দার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন বলেছেন, শ্রোতারাই হচ্ছে আমাদের প্রাণভ্রমরা। লক্ষ লক্ষ শ্রোতার সমর্থন ও ভালোবাসা না থাকলে এই পথ পাড়ি দেয়া হয়তো আরো কঠিন হতো। তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, ১২ বছর এটি একটি মাইলফলক। আমরা প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী খুব জাঁকজমকভাবে পালন করেছি, তারপর আরেকবার করেছি। আজ ১২ বছরে আমরা সেই স্মৃতিচারণ করছি। সেই স্মৃতিচারণের জায়গায় যারা আমাদের মধ্যমণি তারা হলেন- আমাদের শ্রোতা বা ভিউয়ার। আগে অডিওর মাধ্যমে রেডিও চললেও এখন সেটি ফেসবুকের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল করতে পারছি। এই পথচলায় যারা আমাদের সহায়তা করেছেন তারা হলেন আমাদের শ্রোতা, সবার আগে আমি তাদের স্যালুট জানাই।
হাসিব হোসেন বলেন, এই শ্রোতা যেমন আমাদের জেলাতে আছে, তেমনি অন্য জেলাতেও আছে। আবার বিদেশেও আছে। রেডিও মহানন্দার শ্রোতারা আমাদের প্রাণভ্রমরা। শ্রোতা না থাকলে আমাদের পারফর্মসের কোনো দাম নেই। তিনি ব্যবস্থাপনা কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি এবং প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নিরন্তর সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।
এসময় তিনি উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য এবং প্রাণপ্রিয় শ্রোতা মরহুম মনিম উদ দৌলা চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। এছাড়াও তিনি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য অসুস্থ গৌরী চন্দ সীতুর আশু রোগমুক্তি কামনা করেন।
হাসিব হোসেন রেডিও মহানন্দার পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, শ্রোতারা যদি নিজেদের বাড়িতে একটি করে স্টুডিও তৈরি করতে পারেন, তাহলে সেটি হবে বড় পাওয়া। আমাদের সাথে কাজ করে এরকম অনেকে আছেন, যারা বাইরে অনেক বড় বড় জায়গায় বা টেলিভিশনে কাজ করছেন। তিনি বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সামনে আরো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। আর এর মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারলে নিশ্চয় সাফল্য পাবো। ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
হাসিব হোসেন আরো বলেন, রেডিও মহানন্দা পরিচালনায় রেডিও মহানন্দার যারা কর্মীরা আছেন, তারা সবসময় কাজ করেছেন। এমনকি করোনার মধ্যেও কাজ করেছেন। তারা ঈদের দিনও কাজ করেন, আবার ছুটির দিনও কাজ করেন। তাদেরকে আমি স্যালুট জানাই, তারা না থাকলে শ্রোতারা মুগ্ধ হতো না বা শ্রোতারা না থাকলে আমরা যারা কর্মীরা আছি, তারা উদ্বুদ্ধ হতে পারতাম না। তাদের এই ত্যাগ আমরা কখনো ভুলতে পারব না। সবাইকে নিয়ে আমাদের এগোতে হবে। এই জায়গাগুলোতে আমাদের প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশার মিল নাও হতে পারে। তবে রেডিওকে নিয়ে আমরা সামনে এগোতেই পারি। যাদের কথা বলতে পারিনি বা স্মরণ করতে পারলাম না, তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, এই একযুগে জেলার একমাত্র ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম হিসেবে গণমানুষের সেবায় নিয়োজিত থেকেছে রেডিও মহানন্দা। অনেক চড়াই উৎরাই পার করে ১২ বছর পার করল রেডিওটি। রেডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ অনুষ্ঠান করায় এরই মধ্যে দেশে এবং বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরো যুগোপযোগী সকল অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে জেলার গ-ি পেরিয়ে সারাদেশে এবং বিদেশেও কার্যক্রম বিস্তৃত করবে। তারা রেডিওকে আরো এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতি দেন।
বক্তারা আরো বলেন- রেডিও মহানন্দা চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর কণ্ঠস্বর, গণমানুষের প্রাণের প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান নানা বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতেচন করে গড়ে তোলার কাজটি করছে। পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- প্রয়াসের পরিচালক মুখলেছুর রহমান, গম্ভীরার নানা খ্যাত মাহবুবুল আলম, রেডিওটির স্টেশন ম্যানেজার আলেয়া ফেরদৌস, শ্রোতা ও অনুষ্ঠান উপস্থাপক আলী আশরাফ, রেডিওটির ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক গোলাম ফারুক মিথুন, প্রয়াস মানিবক উন্নয়ন সোসাইটির কনিষ্ঠ সহকারী পরিচালক মু. তাকিউর রহমান, দৈনিক গৌড় বাংলার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আজিজুর রহমান শিশির, রেডিও মহানন্দার শিবগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি নূরতাজ আলম, সাবেক স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রোতা মোস্তাকিম, শ্রোতা আলী হাসান ও তাজকেরা আক্তার তাহরিম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংগীত পরিবেশন করেন আলেয়া ফেরদৌস, প্রয়াসের ফিরোজ আলম, আব্দুস সালাম, নয়ন আলী। আবৃত্তি করেন নোশিন ফেরদৌস লাবণ্য।
পরে কেক কাটা হয় এবং প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঞ্চালনায় ছিলেন সোনিয়া শীল।
উল্লেখ্য, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর এফ.এম. ৯৮.৮ মিটার ব্যান্ডে রেডিও মহানন্দা যাত্রা শুরু করে এবং ২৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক সম্প্রচার শুরু হয়।