ভয়াবহ খরায় জিম্বাবুয়েতে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা

তীব্র খরায় ভুগছে দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ। এর জেরে গতমাসে জাম্বিয়া এবং মালাউই ‘জাতীয় দুযোর্গ’ ঘোষণা করে। আর এবার এই তালিকায় যোগ দিল জিম্বাবুয়ে। খরা মোকাবিলায় ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। বুধবার (৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে স্কাই নিউজ।  প্রতিবেদনে বলা হয়, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মনানগাগওয়া বুধবার এক টেলিভিশন ভাষণে সাম্প্রতিক সময়ের খরাকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তবে এই খরার কারণে জনগণকে ভীত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যে কোনো পরিস্থিতিতে সরকার জনগণের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। খরা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মহলের কাছে মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘কম বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট খরা ও ক্ষুধা মোকাবিলায় তার দেশের ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।’ এল নিনোর প্রভাবে জিম্বাবুয়েতে ৮০ শতাংশেরও বেশি ‘স্বাভাবিক থেকে কম বৃষ্টিপাত’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এল নিনো একটি প্রাকৃতিক জলবায়ু ঘটনা। সাধারণত দুই থেকে সাত বছর পরপর এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এটি বিশ্বের আবহাওয়ার ওপর বিভিন্ন প্রভাব ফেলে, যেমন: দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত অনেক কম হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এ বছর কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খরা দেখা গেছে। বর্ষা মৌসুম দেরীতে শুরু হওয়া ও এরপরে কম বৃষ্টিপাত দক্ষিণ আফ্রিকার বিশাল অংশে ফসল ধ্বংস করেছে। মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, এর ফলে লাখ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, মালাউইতে খরার কারণে আনুমানিক নয় মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পাশাপাশি জাম্বিয়াতে ছয় মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি দেশই গত মাসে ‘জাতীয় দুযোর্গ’ ঘোষণা করেছে। জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মনানগাগওয়া বলেছেন, ‘১৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বাসস্থান জিম্বাবুয়ের সবার জন্য খাদ্য সুরক্ষিত করা সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে। জিম্বাবুয়ের কোনও নাগরিককে ক্ষুধায় মরতে হবে না।’ মানবিক সহায়তায় অবদান রাখার জন্য তিনি জাতিসংঘের সংস্থা, স্থানীয় সংস্থা এবং বিশ্ব সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, জিম্বাবুয়েতে প্রায় ২.৭ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছে। খরা মোকাবিলায় জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের ‘জাতীয় দুযোর্গ’ ঘোষণার পর দাতাদের দ্রুত সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশা করছে দেশটি। এর আগে ২০১৬ সালে এবং এরপর ২০১৯ সালেও দেশটিতে ভয়াবহ খরায় জাতীয় দুযোর্গ ঘোষণা করা হয়েছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top