চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। দিবসের কর্মক্রমের মধ্যে প্রথম প্রহরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন। পরে শহরের হরিমোহন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিন-পূর্ব কোণে অবস্থিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে তিনি জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধাগণকে সঙ্গে নিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তিনি সার্কিট হাউসের মূলফটকের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
সকালে শহরের আ.আ.ম মেসবাউল হক (বাচ্চু ডাক্তার) স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। এরপর স্বাধীনতার প্রতীক বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে কুচকাওয়াজের সূচনা করেন জেলা প্রশাসক। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার এ এইচ এম আব্দুর রকিব বিপিএম পিপিএম(বার), স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
পরে, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ দুপুরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে এই অনুষ্ঠান হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুব উল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান। আরো উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার ছাইদুল হাসান, স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক দেবেন্দ্রনাথ উরাও, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ ও রুহুল আমিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিনসহ জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।
আলোচনা শেষে কবিতা আবৃতি, দেশাত্মবোধক গান, চিত্রাংকন, রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
পরে বিকেলে, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের পরিবার, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সম্মানে সংবর্ধনা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রাশাসনের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, ছিলেন জেলা প্রশাসক এ.কে এম গালিভ খাঁন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আাসিফ আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার ছাইদুল হাসান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রুহুল আমিন, স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক দেবেন্দ্রনাথ উরাঁও, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আব্দুস সালাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছমিনা খাতুনসহ অন্যরা। শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় সংবর্ধনা ও ইফতারি প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলাপ্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কোন কিছুর কথা না ভেবে, একমাত্র মার্তৃভূমির টানে, দেশকে শত্রমুক্ত করার জন্য সস্ত্র পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। তাই আপনারাই এদেশের সূর্য সন্তান, সকল কালের, সকল সময়ের। আপনাদের আমরা অভিবাদন জানাচ্ছি, শ্রোদ্ধা জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার ছাইদুল হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিল আর আপনারা সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ছাপিয়ে পড়েছিলেন। আপনাদের সেই ত্যাগ তিতিক্ষা ছিল বলেই আজ স্বাধীন দেশে বসবাস করতে পারছি এবং নিজেকে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারছি। আপনারা দেশেকে স্বাধীন করেছেন, আমরা আপনাদের সেবাই নিয়োজিত, আমরা আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আপনাদের জন্য যে কোন সময় আমার অফিস উন্মুক্ত। যে কোন প্রয়োজনে আপনারা আমাদের অফিসে আসবেন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমি আগেও বলেছি আজ আবারো বলছি; আপনারা শান্তিতে ঘুমাবেন আপনাদের নিরাপত্তা দেবার দায়িত্ব আমাদের। শুধুমাত্র আপনাদের এলাকায় যদি কোন নাশকতাকারী থাকে, মাদক ব্যবসায়ি থাকে, কোন ইভটিজার থাকে! তাহলে সেই তথ্যটা আমাদের জানাবেন। আপনাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই তথ্যটা পেলে হয়তো চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকে আমরা কিছুটা উন্নত জীবন উপহার দিতে পারব।
সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে আসিফ আহম্মেদ বলেন, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নের্তৃত্বে আপনারা আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। আর তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে আমরা একটি ক্ষুধা দারিদ্রতা মুক্ত, শোষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আপনাদের দেখানো পথেই হাটছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর নের্তৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো।
এদিকে, ভোলাহাটে মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্যদিয়ে আজ পালিত হয়েছে। দিবসটি পালনে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলার বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, এনজিও-ননএনজিও পৃথক পৃথকভাবে নানা কর্মসুচী গ্রহণ করে। এলক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন সুর্যোদয়ের সাথে সাথে সমুন্নত স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের কার্যক্রমের সূচনা হয়। দিনব্যাপি নানা কর্মসুচীর মধ্যে ছিলো, ‘৭১ রণাঙ্গণের বীর শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্পণ ও সকল সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় রামেশ্বর মাঠে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার-ভিডিপিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, রচনা ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা, আলোচনা এবং পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বাদ জোহর সকল মসজিদ-মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
বেলা ১২টায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের সংবর্ধনা প্রদাণ করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রভাষক মোঃ রাব্বুল হোসেন, থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন কুমার, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব নুরুল হক ও মনিরুল ইসলাম মুন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়মুর রহমান বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ অন্যরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top