
চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য ১৬ লাখ ৮০ হাজার মে.টন জ্বালানি তেল আমদানির একটি প্রস্তাবসহ মোট ১৪ ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৫৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বুধবার (২৬ জুলাই) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় ক্রয়প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। তিনি বলেন, আজকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৬তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৪টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৬টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৩টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ২টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১টি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ১টি প্রস্তাব ছিল। অনুমোদিত ১৪টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার ৫৯৬ কোটি ৯২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৫ টাকা। অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক ৬ষ্ঠ শ্রেণি, দাখিল ৬ষ্ঠ শ্রেণি ও কারিগরি ৬ষ্ঠ শ্রেণির বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিইসি কর্তৃক ৯১টি লটে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা এবং ৯টি লটে ২য় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোট ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২২৮ কোটি ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮৩ টাকা। প্রতিটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ বাবদ খরচ ৩৫.৪২ টাকা।
‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট-২য় পর্যায় (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পে নিয়োজিত এনজিওসমূহের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় ৯টি সিটি কর্পোরেশন ও ২টি পৌরসভার ২২টি পার্টনারশিপ এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২২টি এনজিওকে ২৭৪ কোটি ৩১ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৯ টাকায় নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ১৯ জুন তারিখের সিসিজিপি সভায় অনুমোদিত হয়। যার মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে। নতুনভাবে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বর্তমান নিয়োজিত এনজিওসমূহের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৫ মাস বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২৪ কোটি ৫৮ লাখ ৭১ হাজার ৫৬৯ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম ফেস-১ প্রকল্পের প্যাকেজ-৫ এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড (২) তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড এবং (৩) মেসার্স শামীম চাকলাদার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১০০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯০৮ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৮ হাজার (+৫%) মে.টন মসুর ডাল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ৮ হাজার মে.টন মসুর ডাল ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৬টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। কেজি ৯৪.৪৯ টাকা হিসেবে ৮ হাজার মে.টন মসুর ডাল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৮০ লাখ (+৫%) লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রির লক্ষ্যে এই ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয় করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেঘনা এডিবল অয়েলস রিফাইনারি লিমিটেড ২ লিটার পেটজাত বোতলে এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার ১৬৩.৯৫ টাকা হিসেবে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৩১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
সভায় এলএনজি সংক্রান্ত কার্যক্রমে সহায়তার জন্য আইনি পরামর্শকের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এলএনজি সংক্রান্ত কার্যক্রমে সহায়তার জন্য আইনি পরামর্শক হিসেবে ওয়েস্ট জুনিয়ারকে ১৫০০ জন ঘণ্টা পরামর্শক সেবা এবং ১৫টি ভ্রমণ বাবদ ৫ কোটি ৫৯ লা ৪৭ হাজার ৯০০ টাকায় নিয়োগের চুক্তি করা হয়, যার মেয়াদ ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ বছর। চুক্তির আওতায় সেবা কার্যক্রম গ্রহণ ইতোমধ্যে শেষ হয়। কিন্তু জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপরোল্লিখিত চলমান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াসহ আরও নতুন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে পরামর্শকের কাজের ক্ষেত্র, জনঘণ্টা এবং ভ্রমণ ব্যয় ইত্যাদি বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যামেন্ডমেন্ট-১ বাবদ অতিরিক্ত ১৩ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ২১৪ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে সংশোধিত চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ওই সময়ের জন্য বিপিসি রাষ্ট্রায়ত্ব ৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১৬ লাখ ৮০ হাজার মে.টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১১৭ কোটি ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ১৭২ মা.ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ হাজার ৮৫০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রিমিয়াম ও রেফারেন্স প্রাইসসহ প্রতি ব্যারেল গ্যাস অয়েলের দাম ৮৭.৫৫ মা.ডলার, জেটএ-১: ৮৭.২০ মা.ডলার, মোগ্যাস ৮৮.৩১ মা.ডলার। প্রতি মে.টন ফার্নেস অয়েল ৪৪৩.৮৩ মা.ডলার এবং মেরিন ফুয়েল ৫৬১.১১ মা.ডলার। গ্যাস অয়েল আমদানির পরিমাণ ১০ লাখ ৪০ হাজার মে.টন, জেট এ-১: ১ লাখ ৩০ হাজার মে.টন, ফার্নেস অয়েল ৩ লাখ ৫০ হাজার মে.টন, মোগ্যাস ১ লাখ মে.টন এবং মেরিন ফুয়েল ৬০ হাজার মে.টন।