
চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় সাংবাদিক ও ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে বাল্যবিয়ে ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সেন্সিটাইজেশন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন। জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনসচেতনতা সৃষ্টি করে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের নিয়ে একটি করে গ্রুপ তৈরি করে তাদের মাধ্যমে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে ছাত্রীদের সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। গড়ে তুলতে হবে কিশোর-কিশোরী আন্দোলন। এজন্য ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা বাল্যবিয়েকে না বলতে শেখে। তারা যেন তাদের মা-বাবাকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সামজিক আন্দোলনও গড়ে তোলা হবে। জেলা প্রশাসকের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁওয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আহমেদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) এবং পুলিশ সুপার হিসেবে সদ্য পদোন্নতি পাওয়া আবুল কালাম সাহিদ ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছমিনা খাতুন। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আমিনুল ইসলাম।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আহমেদ বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ ও বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি তার উপস্থাপনায় বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে দরিদ্রতা, কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার দায়মুক্ত হওয়ার প্রবণতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব, মেয়েশিশুর প্রতি অবহেলা বা তাকে বোঝা মনে করা, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, বিবাহ আইন সম্পর্কে ধারণা কম থাকা, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া, প্রচলিত সামাজিক প্রথা ও কুসংস্কার এবং জেন্ডার বৈষম্য, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন। বাল্যবিয়ের বিশ্ব পরিস্থিতি উল্লখ করে তিনি জানান, ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ৫৯ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয় এবং ২২ শতাংশের ১৫ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়ে যায়। পক্ষান্তরে মালদ্বীপে বাল্যবিয়ের হার দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম মাত্র ২ শতাংশ। এছাড়া শ্রীলংকার ১০ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৮ শতাংশ, ভারতে ২০ শতাংশ, ভুটানে ২৬ শতাংশ, আফগানিস্তানে ২৮ শতাংশ এবং নেপালে ৩০ শতাংশ বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে।
ম্ক্তু আলোচনায় অংশ নেন- জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পেশ ইমাম মো. মুখতার আলী, কাজী দুরুল আলম, শিবতলা মন্দিরের পুরোহিত শ্রী সমির চক্রবর্তী, ফাদার বার্নাড রোজারিও, সিস্টার আন্তনিয়েতা তপ্ন, সাংবাদিক মাহবুব আলম, শহীদুল হুদা অলক, রফিকুল আলম, ডাবলু কুমার ঘোষ, সাজেদুল হক, জাকির হোসেন, মনোয়ার হোসেন জুয়েল, জহরুল ইসলাম।
ইউনিসেফের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত সভায় মুক্ত আলোচনায় বক্তারা, বাল্যবিয়ে একটি সামজিক ব্যাধি। এই ব্যাধিকে দূর করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ধর্মীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন বলে তারা মত ব্যক্ত করেন।