
আদিবাসীদের সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত, উত্তরবঙ্গ থেকে আদিবাসী টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেছে উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম। শনিবার বেলা ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু। লিখিত বক্তব্যে অন্য দাবিগুলো তিনি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হচ্ছে
১. নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকারকে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
২. নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীবিরোধী সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র তথা পুলিশ প্রশাসনকে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
৩. সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল তাদের অঙ্গীকার নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, উত্তরবঙ্গ থেকে একজন আদিবাসী টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ও সংরক্ষিত আসনে সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচন, উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, আদিবাসী/সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাসসহ জীবন-মান উন্নয়নের বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবে;
৪. সকল রাজনৈতিক দলকে অঙ্গীকার করতে হবে, যে সকল নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে সেসকল নেতাকে কোনো রাজনৈতিক দল আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন তো দেবেই না, দলের কোনো পদেও তাদের স্থান দেয়া চলবে না। আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কোনো দলই নির্বাচন-পূর্ব বা পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নির্যাতনের কোনো ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না হয় তার জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দিতে হবে; এবং
৫. সকল ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি এবং যে কোনো সহিংস ঘটনার খবর দ্রুত প্রচার করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল মিডিয়া ও মিডিয়াকর্মীদের নিকট প্রত্যাশা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠটির সভাপতি হিংগু মুরমু, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রদীপ হেমব্রম, সংগঠনের জেলা সম্পাদক কর্নেলিউন মুরমু, সদস্য কুটিলা রাজোয়াড় বক্তব্য প্রদান করেন।
এসময় আদিবাসী নেতা মদন হাঁসদা, বিশ্বনাথ মাহাতো, যতীন হেমব্রম, আদিবাসী নেত্রী রুমালী হাসনাসহ অন্য নেতানেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো একে-অপরের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্ব-বিবাদে ব্যস্ত। দেশের এ অবস্থা আদিবাসীসহ সকল মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। কেননা স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কখনোই তারা নির্ভয়ে এবং স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। স্বার্থান্বেষী মহল বারবার তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন অজুহাতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নির্যাতন, অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ অনেক ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। দেশের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আজ বিভিন্ন কারণে নীরবে দেশত্যাগ করছে।
তারা বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে অন্যান্য নাগরিকের মতোই প্রতিটি নাগরিক তার স্বাধীনতা ভোগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের স্বাধীনতা ভোগ করতে গিয়ে অন্যের স্বাধীনতা খর্ব করা, পরের ধন-সম্পদে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করা কি সংখ্যালঘু কিংবা আদিবাসী শূন্য করার ষড়যন্ত্র? প্রশ্ন রাখেন তারা।