অবরুদ্ধ গাজায় ঢুকল ত্রাণবাহী ট্রাক

যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবশেষে প্রবেশ করতে শুরু করেছে ত্রাণবাহী ট্রাক। শনিবার মানবিক সহায়তা বহনকারী ২০টি গাজায় প্রবেশের জন্য রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে মিশরীয় রেড ক্রিসেন্টের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন। ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যেকার যুদ্ধের ১৫তম দিনে ত্রাণবাহী বেশ কয়েকটি ট্রাক সীমান্ত গেট অতিক্রম করেছে বলে মিশরীয় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে। মিশরীয় রেড ক্রিসেন্টের এসব ট্রাকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের জনসংযোগ বিভাগ থেকে দেওয়া এক বার্তায় এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আজ রাফাহ ক্রসিং দিয়ে ত্রাণবাহী ২০টি ট্রাক প্রবেশের কথা রয়েছে। এসব ট্রাকে ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী ও সীমিত পরিমাণে ক্যানজাত খাবার রয়েছে। প্রত্যাশায় তুলনায় যা খুব অপ্রতুল। এতে গাজার বিপর্যয়কর চিকিৎসা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটবে না।’

অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহর রামাল্লার বাসিন্দাদের মতে, অবরুদ্ধ গাজায় মাত্র ২০ ট্রাক ত্রাণ পাঠানো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আসলে একটি পিআর স্টান্ট, যার মাধ্যমে তারা দেখাতে চায় যে, গাজার ব্যাপারে তারা যত্নশীল। ইসরায়েল যেখানে পুরো গাজা উপত্যকাতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে, সেখানে এই ত্রাণ গাজাবাসীর প্রয়োজনের ধারের কাছেও নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সত্যিই গাজার বিষয়ে যত্নশীল হয়, তাহলে আহত শিশুদের চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে আসার বিষয়ে গুরুতর আলোচনা করা উচিত।  গাজা উপত্যকায় প্রায় ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস। ইসরায়েলের হামলা ও অবরোধের কারণে হামাস নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলটিতে খাবার, পানি, ওষুধ, জ্বালানি প্রায় ফুরিয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাও পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। 

এ প্রসঙ্গে কাতারের দোহার হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্ট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মার্ক ওয়েন জোনস বলেন, ‘ত্রাণবাহী যে ২০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে তা ‘একদম নগণ্য সংখ্যা’। অর্ধ মিলিয়ন মানুষের টিকে থাকার জন্য অঞ্চলটিতে সপ্তাহে প্রায় ১ লাখ টন সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন গাজায় দুই মিলিয়ন মানুষ রয়েছে এবং সেই সাহায্যের একটি অংশই যাচ্ছে, তখন কী করার আছে? গাজায় বিদ্যমান মজুদ ও সরবরাহ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। সেখানে যা প্রয়োজন, সে তুলনায় এ সহায়তাকে সমুদ্রের মধ্যে একটি কণা বলা যেতে পারে। মানবিক সহায়তা পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটিকে গাজার বিজয় হিসেবে দেখলে সমস্যা।’

তার মতে, ‘এর মাধ্যমে যা ঘটতে চলেছে তা হলো, দুর্ভোগ থেকে একটি নির্দিষ্ট স্তরের স্বস্তি বজায় রাখা। কিন্তু এতে মোটেও গাজা উপত্যকার মানুষজনের দুর্ভোগ কমবে না, বিশেষ করে যখন ইসরায়েলি স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা ঝুলে আছে এবং কোনো যুদ্ধবিরতি নেই।’

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে সাধুবাদ দিয়েছেন। তবে সতর্ক করে বলেছেন, ২০ ট্রাক সাহায্য যথেষ্ট নয়। তার মতে, ‘গাজার অভ্যন্তরে পরিস্থিতি ভয়াবহ। খাবার, পানি, বিদ্যুৎ, কিছুই নেই। এই অবস্থা কেবল বিপর্যয়কর নয় বরং সেখানে নানা রোগ সংক্রমণের কারণ হতে পারে।’ গাজায় নিরাপদ এবং টেকসই উপায়ে সঠিক সুবিধাভোগীদের কাছে আরও সাহায্য পৌঁছানো নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top